ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হওয়া পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান বিক্ষোভে কমপক্ষে ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ফলে এই নিহতের ঘটনাগুলো ঘটেছে। আইএইচআর বলছে, ইরানের উত্তর গিলান প্রদেশের রেজভানশাহর শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরানো আগুনে ৬ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া আমোল, উত্তর ইরানেও নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

সংগঠনটির পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এএফপিকে ৫০ জন মারা যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, এরপরও (ইরানে) মানুষ তার মৌলিক অধিকার ও মর্যাদার জন্য প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষের হিসেবে, ৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ নিহতের সংখ্যা ১৭ জন। এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এরই মধ্যে দেশটির ৮০টি শহরে ছড়িয়ে গেছে।

মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদ ও পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভকারীদের ‘ইসরায়েলের সেনা’ হিসেবে অবিহিত করছে সরকারপন্থি ও হিজাবপন্থিরা। তারাও বিক্ষোভের আয়োজন করেছে এবং সেই বিক্ষোভ সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

তেহরানে হিজাবপন্থী সমাবেশে ইরানিরা জাতীয় পতাকা নেড়ে বিক্ষোভ করছে

‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘কোরআনের অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত’- স্লোগানে তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর প্রদক্ষিণ করে সরকারপন্থিদের মিছিল।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান মাহসা আমিনি

চলমান উত্তাল পরিস্থিতিতে ইরানে ইন্টারনেটের গতিও কমিয়ে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। একটি বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ার কারণে লাখ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তেহরান ও দক্ষিণ ইরানের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠাতে পারলেও কোনো ছবি পাঠাতে পারছেন না। ইনস্টাগ্রাম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।

ইন্টারনেট সেবা নিয়ে ইরানি কর্তৃপক্ষের এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটিতে ইন্টারনেটে হস্তক্ষেপ নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ২০১৯ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময়েও প্রায় সপ্তাহখানেক ইন্টারনেট বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।